Joy Jugantor | online newspaper

জমেছে ধানের চারার হাট, দালালের খপ্পড়ে ক্রেতা-বিক্রেতা

 গাইবান্ধা  প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

জমেছে ধানের চারার হাট, দালালের খপ্পড়ে ক্রেতা-বিক্রেতা

জমেছে ধানের চারার হাট, দালালের খপ্পড়ে ক্রেতা-বিক্রেতা

শস্য ভাণ্ডারখ্যাত উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার মাঠজুড়ে পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো চারা রোপণের কাজ। আর এ লক্ষ্যে জমে উঠেছে ধানের চারা কেনা-বেচার হাট। অনেক কৃষকই হাটে গিয়ে বিক্রি করছেন চারা। আবার অনেক কৃষকই চারা সংগ্রহে ছুটে আসছেন এই হাটে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে একটি দালাল চক্র। তারা ক্রেতা-বিক্রেতাকে ফাঁদে ফেলে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা। এদের খপ্পড়ে পড়ে ঠকছেন হাটে আসা কৃষকরা। 

গাইবান্ধা জেলার দাড়িয়াপুর, ভরতখালী, মাঠের হাট, শোভাগঞ্জ, পাঁচপীর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাদুল্লাপুর হাট, মীরপুর ও নলডাঙ্গা হাটে বোরো ধানের চারা ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয়েছে। এসব হাটে বেশ কিছু দালাল কৃষকদের চারা কেনা-বেচা করে দেওয়ার নামে পকেটস্থ করছে টাকা। এসব দালালের উৎপাতে চরম বিপাকে পড়ছেন চারা ক্রয় বিক্রয় করতে আসা কৃষকরা। 

কৃষকদের অভিযোগ, হাটে আসা মাত্র ধমক দিয়ে ধানের চারা কেনা-বেচার দায়িত্ব নেওয়ার নামে টাকা গ্রহণ করেছে দালালরা।   

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মাসে তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় গাইবান্ধা জেলার বেশ কিছু বোরো বীজ তলা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে চারা সঙ্কটে পড়েছেন কৃষকরা। হাটে ধানের চারা পাওয়া গেলেও তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন বার্গাচাষিরা। তাদের নিজস্ব জমি না থাকায় অন্যের জমি বর্গা (আদি) নিয়েছেন। এর আগে বীজতলা করতে না পাড়ায় তাদের একমাত্র ভরসা হাটের চারা। ফলে অধিক দামে চারা কিনে চরম হিমশিম খাচ্ছেন তারা। 

শুধু চারায় নয় সম্প্রতি বিদ্যুৎ, ডিজেল, সার-কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় বোরো আবাদে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে তাদের। ফলে দুশ্চিন্তা বেড়েছে কৃষকদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা রিকশা, ভ্যান ও বাইসাকেল যোগে বস্তাভর্তি করে ধানের চারা এনে ওইসব হাটে বিক্রি করেছেন। আর ক্রেতারা মান যাচাই ও জাত নির্ণয় করে চাহিদা মতো চারা কিনছেন। পরে চাষিরা তাদের কেনা চারা জমিতে নিয়ে রোপণ করছেন। 


 চারা বিক্রেতা মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমার জমিতে বীজতলা রয়েছে। সেখানেই ধানের চারা উৎপাদন হয়। জমিতে চারা লাগানো হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত ১০ পোন চারা হাটে বিক্রি করলাম। এই চারা বিক্রির জন্য দালালকে টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়া প্রতি পোন চারা বিক্রি বাবদ ২০ টাকা হারে হাট ইজারাদারকেও দিতে হয়েছে।’

চারা কিনতে আসা জমির উদ্দিন বলেন, ‘এ বছরে এক একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করব। এরই মধ্যে শীতের কারণে বীজতলার ৫০ ভাগ চারা নষ্ট হয়েছে। চারা সঙ্কটের কারণে হাইব্রিড জাতের এক পোন চারা (২০ গোন্ডা) ৪৫০ টাকা ও দেশি চিকন জাতের চারা ৩০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। ৪ পোন চারা কেনার পর ইজারাদার ও দালালকে টাকা দিতে হয়েছে।’

বর্গাচাষি আমজাদ হোসেন বলেন, ‘নিজের জমি না থাকায় প্রতিবেশী এক ব্যক্তির দেড় বিঘা জমি আদি (বর্গা) নিয়েছি। সেই জমিতে রোপণ করতে ৯০০ টাকা দিয়ে চারা কিনলাম। এভাবে চড়া দামে চারা-ডিজেল-সার-কীটনাশক কিনে আবাদ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। এছাড়া চারা কেনার সময় দালালের খপ্পড়ে পড়ে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়েছে।’

সাদুল্লাপুর হাট ইজারাদারের প্রতিনিধি তাজুল ইসলাম তাজু বলেন, ‘হাটে প্রচুর পরিমাণ ধানের চারা কেনা-বেচা হচ্ছে। পোন প্রতি খাজনা ২০ টাকা করে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে।’

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৫ ভাগ জমিতে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। বোরো আবাদে কৃষকদের লাভবান করতে ইতোমধ্যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলে অনেকটাই লাভবান হবেন।’