Joy Jugantor | online newspaper

বগুড়ায় জোঁক-বিচ্ছুতেই তার জীবিকা

মাসুম হোসেন

প্রকাশিত: ১৫:৩৫, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ০৬:০৭, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

বগুড়ায় জোঁক-বিচ্ছুতেই তার জীবিকা

জোঁক-বিচ্ছু থেকে তৈরি তেল বিক্রি করছেন করছেন খোকন।

সামনে জীবন্ত জোঁক ও বিছা (বিচ্ছু) নিয়ে বসে আছেন। ক্যানভাসে বলছেন বিভিন্ন রোগের সমাধান আছে জোঁক ও বিচ্ছুতে! তার মুখরোচর কথা শুনে উচ্ছুক জনতারাও তাকে ঘিরে রেখেছেন।

রোববার বিকেলে এমন ঘটনা দেখা গেছে বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায়। কেউ তেল কিনতে আসলে ক্রেতাকে সামনে রেখেই জোঁক-বিচ্ছু থেকে তেল তৈরি করে বিক্রি করেন তিনি।

বিক্রেতার নাম মো. খোকন। ৫৫ বছর বয়সী খোকন ২৮ বছর ধরে জোঁক-বিছার কারবার করছেন। বগুড়া জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে জোঁক সংগ্রহ করেন তিনি। আর বিছা সংগ্রহ করেন সাঁওতালদের কাছ থেকে।

তিনি বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম আলীমুদ্দিন।

জানা গেছে, প্রাচীন ইউনানী শাস্ত্রে জোঁক দিয়ে চিকিৎসা অনেক পুরনো। আধুনিক চিকিৎসার যুগে বগুড়ার শহর ও গ্রামের বাজারগুলোতে এখনও ক্যানভাসারদের জোঁকের তেল দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে দেখা যায়। তবে বিছার তেল দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ সচরাচর চোখে পড়ে না। ইউনানী শাস্ত্রে জীবন্ত জোঁক দিয়ে চিকিৎসার কথা থাকলেও, তেল দিয়ে চিকিৎসার বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ। কিন্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন এ চিকিৎসার প্রতি ঝুঁকছেন সাধারণ মানুষরা। তবে জোঁক ও বিচছার তেল দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশই নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ। বাত-ব্যথা-যৌনসমস্যাসহ নানা ধরণের বাহ্যিক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃর করা জোঁক ও বিছার তেল।

তবে চিকিৎসকরা এসব প্রাণির তেল ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। যেকোন প্রাণির তেল ব্যবহারের উপকারের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কায় বেশি বলছেন চিকিৎসকরা।

বগুড়া শহরের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন, জাকির হোসেনসহ অন্তত দশজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাত-ব্যথা-যৌন সমস্যা সমাধানে জোঁকের তেল ব্যবহার করা হয়। এবং এটি অনেক ক্ষেত্রে কার্যকরি। এছাড়াও বিচ্ছুর তেলও নাকি পুরাতন ব্যথা নিরাময় করে। আর অনেকেই এসব ব্যবহার করছেন।

কথা হয় জোঁক-বিছার তেল বিক্রেতা খোকনের সঙ্গে। তিনি জানান, বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে জোঁক ও বিছার তেল বিক্রি করেন তিনি। ক্রেতাদের সামনেই এই দুই প্রাণি থেকে তেল তৈরি করেন। জোঁকের তেল বাত-ব্যথা-যৌন সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ কেনেন। আর বিছার তেল ব্যথা নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে পুরাতন ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে বিছা বা বিচ্ছুর তেল কেনেন অনেক মানুষ এবং উপকারও পাচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

খোকন জানান, এই দুই প্রাণির তেল বিক্রি করে দৈনিক ৭০০ টাকা আয় করেন তিনি। এ ব্যবসায় থেকে আয়ের টাকা দিয়ে তার সংসার চলে। ২৮ বছর ধরে বগুড়া জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে ঘুরে তেল বিক্রি করনে। তবে গত ছয় থেকে সাতদিন যাবৎ শহরের সাতমাথা এলাকায় বসেন তিনি। কিশোর বয়সে স্থানীয় এক কবিরাজের সহযোগি ছিলেন। তার কাছ থেকেই এই দুই প্রাণি থেকে তেল তৈরি করা শিখে নেন।

তিনি আরও জানান, বগুড়ার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জোঁক সংগ্রহ করেন। আর বিছা সাঁওতালদের কাছ থেকে কেনেন। ১০০ বিচ্ছু কিনতে তার গুনতে হয় তিন হাজার টাকা। তার ক্রেতারা ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পরিমাণের তেল কেনেন। তার তেল ব্যবহার করে মানুষ বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলে দাবি তার।

বগুড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. সাজ্জাদ-উল-হক জানান, জোঁক-বিচ্ছুর তেলে উপকার হয়, এমন কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখা নেই। এসব ব্যবহারে উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিক্রেতারা কোনো উপায়ে প্রাণি থেকে তেল তৈরি করছেন এই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রাণির শরীরে বিষাক্ত অনেক কিছুই থাকে। যা পরিশোধিত করে কোনো কিছু তৈরি করতে হয়। আর জোঁক-বিচ্ছুর তেল স্বাস্থ্যর জন্য উপকারি কিনা এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখা নেই। ফলে এটি অবশ্যই ক্ষতিকর। আর কোনো প্রাণির তেল চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগবে।

তিনি আরও জানান, জোঁক-বিচ্ছুর চিকিৎসার নামে এই অবৈধ ক্ষতিকর চিকিৎসা বন্ধে প্রয়োজন মানুষের সচেতনতার। শরীরের বাহ্যিক অংশে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রাণির তেলই ব্যবহার করা যাবে না। এসব তেল ব্যবহারকারীরা ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বেন।