Joy Jugantor | online newspaper

টাকা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

নওগাঁ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ১০ জুন ২০২১

টাকা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

পত্নীতলা উপজেলার নির্মইল ইউনিয়নের রাধানগর উত্তরপাড়া গ্রামের এই আম বাগান অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ।

নওগাঁয় ফেন্সিডিলসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে ৪০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এছাড়াও জব্দকৃত ফেন্সিডিল উদ্ধারের পর জব্দ তালিকায় হিসেবে কম লিখার অভিযোগ উঠেছে অভিযানে থাকা জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

মামলার এজাহার ও জব্দ তালিকা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুন বিকেল ৫টায় জেলার পত্নীতলা উপজেলার নির্মইল ইউনিয়নের রাধানগর উত্তরপাড়া গ্রামের একটি আম বাগান থেকে রাজু বাবু (২৫) ও আলমগীর হোসেন (২৪) নামে দুই যুবককে আটক করা হয়। স্থানীয়রা সেখানে বিষয়টি দেখার জন্য ভীড় করে। এসময় হলুদ রংয়ের প্লাস্টিকের বাজার করা তিনটি ব্যাগ থেকে ১০০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। যেখানে প্রথম ব্যাগে ৪০ পিস এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যাগে ৩০ পিস করে ফেন্সিডিল ছিল। যা স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে উদ্ধারস্থলে জব্দ দেখানো হয়। আটককৃতদের বাড়ি একই গ্রামে।

ডিবি পুলিশ পরিদর্শক রাজিবুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই মোস্তফা কামাল, এসআই তরিকুল ইসলাম, এএসআই মোসলেম উদ্দিন, কনস্টেবল গোলাপ উদ্দিন ও কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন অভিযান পরিচালনা করে।

এলাকায় গিয়ে জানা যায়, রাজু বাবু ও আলমগীর হোসেন আত্মীয়। তাদেরকে আটক করা অবস্থায় ঘটনাস্থলে হলুদ রংয়ের প্লাস্টিকের বাজার করা চারটি ব্যাগ ছিল। ব্যাগের ভিতর কি ছিল তা কাউকেই দেখানো হয়নি। ডিবি পুলিশরা তিনজন ব্যক্তির নিকট থেকে প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী হিসেবে জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার আগে তাদের হাতে চারটি ব্যাগের পরিবর্তে তিনটি ব্যাগ দেখতে পায় স্থানীয়রা।

জব্দ তালিকায় স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে বাজার করা তিনটি হলুদ ব্যাগ উদ্ধার করে ১০০ পিস ফেন্সিডিলের কথা বলা হয়েছে। অথচ ঘটনাস্থলে স্বাক্ষীদের কাছ থেকে শুধু স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাগের ভিতরে কি পরিমাণ ফেন্সিডিল ছিল তা দেখানো হয়নি।

আটক রাজুর বাবা আহাদ আলী বলেন, ছেলেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। পরে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাড়িতে এসে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি।

মামলার এক নম্বর স্বাক্ষী আরমান হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে পরে আসি। সাদা পোশাকে থাকা পুলিশরা ঘটনাস্থলে আসামীদের পেয়েছেন কিনা এমন কথা বলে আমার কাছে স্বাক্ষর চাইলো। স্বাক্ষর নেওয়ার পর তারা মোটরসাইকেলে ওঠে আটকৃকদের নিয়ে চলে যায়। তাদের কাছে থাকা তিনটি ব্যাগে কি ছিল বা কি পরিমাণ ফেন্সিডিল ছিল তা আমাদের দেখানো হয়নি। মামলার তিন নম্বর স্বাক্ষী আয়নাল হকও একই কথা জানান।

প্রক্ষত্যদর্শী মতিউর রহমান বলেন, যখন ওই দুইজনকে আটক করা হয় তখন ঘটনাস্থলে চারটি ব্যাগ মাটিতে রাখা ছিল। কিন্তু যখন দুইজনকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে তখন তিনটি ব্যাগ দেখেছিলাম। ব্যাগে কি আছে তা কাউকেই দেখানো হয়নি। আটকের সময় একজন মহিলাকে আমরা দেখেছিলাম। ওই মহিলা কে তা আমরা চিনি না।

অভিযানে থাকা এসআই তরিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ পরিদর্শক রাজিবুল ইসলাম ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনিই সব বলতে পারবেন।

এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক ও অভিযানের নেতৃত্ব দানকারী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে আটক এবং ১০০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। তবে আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়ার শর্তে কোন টাকা দাবী করা হয়নি। এমনকি কোন টাকাও নেওয়া হয়নি।