Joy Jugantor | online newspaper

আত্রাইয়ে সেচের অভাবে ২৫০ বিঘার জমির ধান নষ্ট

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ৪ মে ২০২১

আত্রাইয়ে সেচের অভাবে ২৫০ বিঘার জমির ধান নষ্ট

সেচের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে ফসল।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় সেচ পাম্পের মিটার খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে শতাধিক কৃষকের প্রায় ২৫০ বিঘা বোরো জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর কারণ হিসেবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অবহেলাকেই দায়ী করছেন চাষীরা। বিল পরিশোধের পর আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত মিটার সংযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে জমিতে সেচ দিতে পারেন নি চাষীরা। এতে ধান পুড়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। 

এমন ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বিশা ইউনিয়নে দর্শনগ্রামে।

জানা গেছে, উপজেলার দর্শনগ্রামের মাঠে মহাতাব উদ্দিন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে এলএলপি বিদ্যুৎ সংযোগ (নদী থেকে পানি উঠানো) নিয়ে আত্রাই নদী থেকে শতাধিক কৃষকের প্রায় আড়াইশ বিঘা জমির ধান চাষ করছিলেন। মার্চ ও এপ্রিল মাসের ২৪ হাজার টাকা বিদ্যুৎবিল বকেয়া থাকায় গত ১৯ এপ্রিল সংযোগ কেটে দেয়া হয়। এরপর ২১ এপ্রিলে বিলম্ব মাসুলসহ বকেয়া পরিশোধ করে সংযোগ পেতে পুনরায় মিটার স্থাপনের আবেদন করেন তিনি।

কিন্তু পাশের সেচ পাম্পের মালিক আজাহার আলীর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় মহাতাব উদ্দিনকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়। এদিকে মহাতাব উদ্দিনের আওতাভুক্ত কৃষকদের জমিতে কমপক্ষে আরো তিনটি সেচ প্রয়োজন। সেচের অভাবে এসব জমির ধান মরে যেতে শুরু করায় হতাশ হয়ে পড়েন চাষীরা। গত ১৬ দিন থেকে জমিতে সেচ না দেওয়ায় জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। জমির ধান পাকা মনে হলেও বাস্তবে সব ধান চিটায় পরিণত হয়েছে। এর ফলে যেখানে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০মণ ধান উৎপাদিত হওয়ার কথা সেখানে এখন ৮ থেকে ১০ মণ হারে ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারছেন। এতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন।

দর্শনগ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই সেচ প্রকল্পের আওতায় আমার ১৫ বিঘা জমিতে ব্রিআর-২৯ ও কাটারি ভোগ জাতের ধান ছিল। ব্রিআর-২৯ ধানে তিনটা সেচ ও কাটারি ভোগে দুইটা সেচের প্রয়োজন ছিল। প্রতি বিঘাতে দেড় হাজার টাকা সেচ খরচ দিতে হয়। জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ধান শুকিয়ে গেছে। সোমবার (৩মে) শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা হয়েছে। এতে বিঘা প্রতি ৮-১০ মনের মতো ধান হবে। যেখানে প্রতি বছর ২৫-৩০ মনের মতো ধান পেতাম। পল্লী বিদ্যুতের গাফিলতির কারণেই আজ আমাদের এমন ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।

এলএলপি সংযোগের অপারেটর মহাতাব উদ্দিন বলেন, মার্চ ও এপ্রিল মাসের ২৪ হাজার টাকা বিদ্যুৎবিল বকেয়া থাকায় গত ১৯ এপ্রিল সংযোগ কেটে দিয়ে মিটার খুলে নিয়ে যায়। এরপর ২১ এপ্রিলে বিলম্ব মাসুলসহ বকেয়া পরিশোধ করে সংযোগ পেতে আবেদন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংযোগ দেয়া হয়নি। জমিতে পানি দিতে না পারায় ধানের গাছ শুকিয়ে অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। নিরুপায় হয়ে অনেকে ধান কেটে নিয়েছে। যেখানে বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০মণ হারে ফলন হচ্ছে। তবে কবে সংযোগ দেওয়া হবে তা বলতে পারছিনা। পল্লী বিদ্যুতের অবেহলার কারণে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। 

আত্রাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম ফিরোজ জামান বলেন, মহাতাব উদ্দিনের মিটারটি বেশকিছু দিন থেকে নষ্ট। বিষয়টি তিনি অফিসকে অবগত করেননি। এছাড়ার তার বিদ্যুৎবিলও বকেয়া ছিল। তার মিটার নষ্ট হওয়ার কয়েকদিন পর অভিযোগ করা হয়। এতে সন্দেহ হয় তাহলে কয়েকদিন তিনি কিভাবে জমিতে সেচ দিলেন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় তার মিটারটি নষ্ট অবস্থায় আছে। এছাড়া তিনি পাশের আজাহার আলীর এলএলপি সেচপাম্প থেকে অবৈধভাবে পার্শ্ব সংযোগ নিয়ে সেচ কাজ পরিচালনা করছিলেন। পরে তার নষ্ট মিটারটি খুলে নিয়ে আসা হয়েছে। নষ্ট মিটার খুলে নিয়ে আসার দুইদিন পর তিনি বকেয়া পরিশোধ করেন। আবার উল্টো তিনিই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।