
সারিয়াকান্দির চরে সারিবদ্ধভাবে চলছে ঘোড়ার গাড়ী। ছবিটি সম্প্রতি যমুনার দারুনাচর থেকে তোলা
বিল এলাকার রাস্তা-ঘাট, অলি-গলিতে এখন আর ঘোড়ার গাড়ী বা টমটম দেখা না গেলেও চলাঞ্চলের উচু-নিচু বালুময় রাস্তা-ঘাটে আজও ছুটে চলছে ঘোড়ার গাড়ী। চরের একমাত্র বাহন বলা যায় এটিকে। এক চর থেকে অন্য চরে স্ব-গৌরবে চলা যায়। এ গাড়ী কৃষি পণ্য পরিবহনের পাশা-পাশি চরের যাত্রীদের আরাম-আয়েশের সাথে পৌছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আর এই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন চরের অনেক বেকার যুবক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে নৌকায় সুখময় যোগাযোগ চললেও বর্ষার পর উচু-নিচু বালুময় পথে পায়ে হেটে চলাচল এতটায় কষ্ট যে, তা বলাই বাহুল্য। সেখানে বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরী করা একটি ঘোড়া প্রায় ১ টন (২৭ মণ) পণ্য নিয়ে নিজস্ব গতিতে ছুটে চলে এ গাড়ী। যাত্রী ধারন ক্ষমতা ১২-১৪ জন। মিনিবাস বা মাইক্রোবাসের পুরাতন রিং, টায়ার ও টিউবের উপর ভর করে চলে এই গাড়ি। চরের কাঠমিস্ত্রীরাই তৈরী করেন এই ঘোড়ার গাড়ী। খরচ পরে ৭০-৮০ হাজার টাকার মত। যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়ার বিষ-বাস্প এর সময়ে পরিবেশ বান্ধব ঘোড়ার গাড়ী ব্যাপক জনপ্রিয় চরাঞ্চলে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল ও হাটশেরপুর ইউনিয়নের প্রায় ১১০টি চর গ্রামে ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত কৃষি পণ্য নিয়ে চলাচল করে। এসব চরের কোন কোন রাস্তায় যাত্রী নিয়েও চলাচল করে এই ঘোড়ার গাড়ি।
কাজলা ইউনিয়নের ময়ুরের চরের কৃষক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, চরাঞ্চল কৃষি পণ্যে ভরপুর থাকে। কিন্তু বালুময় পথ হওয়ায় সেসব পণ্য নিয়ে হাটে-বাজারে যাতায়াত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা আমাদের উৎপাদিত কিছু পণ্য বিল এলাকার হাট-বাজরে নিয়ে যেতে পারলে আমাদের পণ্যের সঠিক মূল্য পাই। এ ক্ষেত্রে চরের কৃষকদের কাছে ঘোড়ার গাড়ির গুরুত্ব অপরিসীম।
হাটশেরপুর ইউনিয়নের চকরথিনাথ চরের ২৯ বছর বয়সি কবিরুল ইসলাম বলেন, এ গাড়ী দিয়ে দৈনিক ১২০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করে থাকি। ঘোড়ার খাওয়া খরচ ছাড়া তেমন একটা খরচ নেই বলে, আয় বেশি হয়। চরে ঘোড়ার গাড়ী ৭/৮ মাস চলে। বন্যার সময় এই গাড়ি চলেনা তখন সংসারের অনান্য কাজ করে থাকি। আমাদের উপজেলায় কমপক্ষে ৫০০ মত ঘোড়ার গাড়ী আছে। এক চর থেকে অন্য চরে ছুটে চলতে ভালই লাগে আমাকে।
কর্ণিবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার আলী মন্ডল বলেন, চরে এটি একটি জনপ্রিয় বাহন। আমার ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক ঘোড়ার গাড়ী আছে। নান্দিনাচর, ডাকাতমারাচর, ইন্দুরমারাচর ও পুর্ব শনপোচাচরে নিয়মিতভাবে চলাচল করে এই দুরন্ত বাহন।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো. নাইম হোসেন বলেন, দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যর সাথে টমটম বা ঘোড়ার গাড়ী ওৎপোতভাবে জড়িত। শহরে দেখা না গেলেও চরে আজও চলে ঘোড়ার গাড়ী। তবে তারা যদি আমাদের কাছে কোন সহযোগিতা চাইলে আমরা তা পূরণের চেষ্টা করবো।