Joy Jugantor | online newspaper

বগুড়ার ভিএম স্কুলের ঘটনায় যা জানালেন সেই জজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ২৯ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ০৭:৪১, ২৯ মার্চ ২০২৩

বগুড়ার ভিএম স্কুলের ঘটনায় যা জানালেন সেই জজ

ছবিঃ জয়যুগান্তর।

বগুড়ার সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন দাবি করেছেন, গত চার মাস ধরে আমার মেয়ে র‍্যাগিং এবং বুলিংয়ের শিকার হচ্ছিল বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই বিষয় নিয়ে তার বন্ধুদের সাথে মত পার্থক্য হয়। ঘটনা নিয়ে তারা ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনা করে। স্কুলের ঘটনায় আমি কোনো অভিভাবককে ডাকিনি। স্কুলে গিয়ে আমার মেয়ের বন্ধুদের বুঝাচ্ছিলাম। এখানে কোনো মা বা অভিভাবকের পা ধরানো বা মাফ চাওয়ার মতো কিছুই হয়নি। 

মঙ্গলবার বগুড়ার সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন তিন পাতার এক বিবৃতি আমাদের হাতে এসেছে। সেখানে এই বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। 

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আমার মেয়ে জানুয়ারি মাসে ভর্তি হয়। সে অত্যন্ত মেধাবী ও শান্ত প্রকৃতির। ...স্কুলের স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে র‍্যাগিং ও বুলিং করে আসছিল। গত ২০ মার্চ ক্লাসরুম ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্লাসমেটরা আমার মেয়েকে ফের র্যাগিংও বুলিং শুরু করে।...একটা সময় আমার মেয়ে তার ক্লাসমেটদের ভয়ে পেছনে অত্যন্ত ময়লা জায়গাটি ঝাড়ু দিতে গেলে জারার ক্লাসমেটদের ১২ জন মেয়েসহ মনিটরিংয়ের কয়েকজন মেয়ে (জয় বাংলা, জজের মেয়ে রুম ঝাড়ু দিচ্ছে, জজের সরকারের কামলা) স্লোগান দিতে থাকে। ... এক সময় ওরা (শিক্ষার্থী) বলতে থাকে, ‘জজের মেয়ে বলে ভাব ধরে ঘড় ঝাড়ু দেয় না, জজের মেয়ে ভাব ধরে ঘর ঝাড়ু দেয় না, জজ সরকারের কামলা’।’

তখন আমার মেয়ে তার এক ক্লাসমেটের কাছে জানতে চায়ম আমার মা সরকারের কামলা হলে তোমার আব্বু কী করে? তখন ওই ক্লাসমেট বলে তার বাবা ব্যবসায়ী। আমার মেয়ের ক্লাসমেটসহ তার গ্রুপের মেয়েরা মিলে আমার মেয়েকে কোন কথা বলতে দিচ্ছিল না। আমার মেয়ে বলতে থকে আমার ডাস্ট এলার্জি আছে। এই বলতে বলতে আমার মেয়ের নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে এবং সে কান্না করতে থাকে। আমার মেয়ে তখন ক্লাসের দরজা খোলা পেয়ে ক্লাস শিক্ষকের নিকট ছুটে যায়। তখন আমার মোবাইল ফোনে শ্রেণি স্কুল শিক্ষিক মুসলিমা ম্যাডাম কল দিলে আমি এজলাসে থাকার কারণে আমার অফিস সহায়ক শহিদুল ইসলাম ফোন রিসিভ করে।

বিবৃতি আরও বলা হয়, ঘটনা শুনে আমি অফিস সহায়ক ও ড্রাইভার রায়হানকে স্কুলে পাঠাই আমার মেয়েকে আনার জন্য। তারা আমার মেয়েকে অফিসে নিয়ে আসে। আমি তার নাক থেকে রক্ত পড়া অবস্থা এবং কান্নারত অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যাই এবং তাকে জিজ্ঞাসা করি তার সাথে কী হয়েছে?’ 

‘সে তখন ভীত অবস্থায় বলতে থাকে মা আমি আর এই স্কুলে ক্লাস করতে পারব না। ক্লাসের একটি গ্রুপের ১২ জন মেয়ে শুধু আমাকে জজের মেয়ে, সরকারের চাকরের মেয়ে বলে র্যা গিং ও বুলিং করে।এবং নিয়মিত মানসিক নির্যাতন করে।’ 

এরপর বাসায় এসে আমার মেয়ে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেসবুকের স্টোরিতে একটি পোস্ট দেয়। উক্ত পোস্টটি আমি দেখার সাথে সাথে ডিলিট করে দেই। কিন্তু স্কুলের কয়েকজন মেয়ে (আমার মেয়ের ক্লাসমেট) স্ক্রিন শটটি নিয়ে তাদের ফেসবুক স্টোরিতে আমাকে ও আমার মেয়েকে নিয়ে অশালিন ভাষায় মন্তব্য করতে থাকে। তাছাড়া তারা স্ক্রিনশটগুলো বগুড়া বালিকা ভিএম স্কুল ও জেলা বালক স্কুলের জয়েন্ট গ্রুপে ছেড়ে দেয় এবং বিভিন্ন ছেলেদের ট্যাগ করতে থাকে। তখন বিষয়টি আমি পুলিশকে জানাই। 

কিন্তু পরের দিন সকালেও তারা স্ক্রিন শট ও স্টোরিতে আমার মেয়ের ক্লাসমেট আমাকে ও আমার মেয়েকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে।...এরপর স্কুলের প্রধান শিক্ষিক রাবেয়া খাতুন আমাকে তার অফিসে যেতে বলেন। আমি আমার সন্তানের শিক্ষার্থীজীবনের কথা চিন্তা করে সেখানে যেতে রাজি হই। ওখানে একজন আইনজীবী অভিভাবকও ছিলেন। 

ওই সময়ে আমি বিভিন্ন গ্রুপে ছড়ানো স্ক্রিনশটগুলো সরানোর জন্য অনুরোধ করি। একই সাথে বাজে মন্তব্য করতে মানা করি। কিন্তু তারা আমাদের কারও কথাতেই সায় দিচ্ছিল না। তখন প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ করে তার রুম থেকে আমি, আইনজীবী বকুল ও এক পুলিশ কর্মকর্তা বের হতে থাকি। এ সময় এক শিক্ষার্থীর মা আমাকে জড়িয়ে ধরেন। উনি বলেন যে, তার মেয়ে তার অবাধ্য। তার কথা শোনে না। তখন আমি তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলি যে, আমি তার কষ্ট বুঝতে পারছি। ঠিক তখনই শ্রেণি শিক্ষিকা মুসলিমা ও হাসি বেগম ওই আবিভাবককে আমার পা ছোয়ার জন্য ইশারা-ইঙ্গিত ও মৌখিক নির্দেশ দেন। তখন আমি, অভিভাবক আইনজীবি বকুলসহ অন্যরা তাকে নিবৃত করে ঐখান থেকে বের হয়ে আসি। আমি কাউকে পা ধরার নির্দেশ দেইনি বা পা ধরতে বাধ্যও করিনি। ইহা একটি অন্যায়, অবিবেচক ও গর্হিত অভিযোগ। 

‘ছাত্রীদের র‍্যাগিং ও বুলিং বিষয়গুলো যেন গনমাধ্যমের সম্মুকে চলে না আসে সেজন্য বিচারক ও তার মেয়েকে জড়িয়ে গনমাধ্যম ও স্যোশাল মিডিয়াতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এবং বিচার বিভাগকে নিয়ে অপমানসূচক কথাবার্তা প্রচার করে জনমনে বিচারকদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি করছে। আমি এতদিন আমার ও আমার শিশুকন্যার প্রাইভেসির কথা চিন্তা করে মিডিয়া থেকে দূরে ছিলাম। এবং কোন বিবৃতি প্রদান করিনি। কিন্তু একটি মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে চলা আমার জন্য কষ্টকর। বিধায় আমি সত্য বিষয়টি তুলে ধরলাম।’ 

বিবৃতির বিষয়ে সাবেক বগুড়া সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিন বলেন, এই সত্যগুলো সাধারণ মানুষের জানা দরকার। নইলে একতরফা বার্তা যাচ্ছে মানুষের কাছে। তাই বিবৃতি দিয়েছি।’

গত ২১ মার্চ বিচারকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীর মাকে অপদস্থ করার অভিযোগে বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। ২৩ মার্চ ওই বিচারকের বিচারিককে প্রত্যাহারের মাধ্যমে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করে সুপ্রিম কোর্ট।