
ডাক্তার দেখানোটা চরবাসীর কাছে বিলাসিতা, আছে কুসংস্কারও
আল্লার উপর ভরসা করেই চলছে চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। সূর্যের উদয়-অস্তের নিয়মে ভাটা না পড়লেও যাপিত জীবনের সুযোগ-সুবিধায় রয়েছে সেখানে ব্যাপক তফাৎ। সাধারণ গ্রামের সাথে চরের হালহকিকতে রয়েছে বেজায় গড়মিল।
কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকায় দূরে গিয়ে ডাক্তার দেখানোটা যেন চরবাসীর কাছে বিলাসিতা। তার ওপর আছে কুসংস্কারের বেড়াজাল। মাসিককালে ব্যবহার করা কাপড় রোদে শুকাতেও, বাও-বাতাসের ভয়। বিনিময়ে পোহান নানারকম শারীরিক ঝুঁকি।
বাল্যবিয়ের হারও এখানে প্রকট। তার ওপর প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে অসচেতনতায় কখনও মরছে অনাগত সন্তান, কখনো মা।
স্থানীয়রা বলেন, নৌকায় অথবা হেঁটে নদীর ঐ পাড়ে যাওয়া লাগে ডাক্তার দেখাতে। টাকাও লাগে মেলা। ঐ যে কথায় বলে না, যার হায়াত আছে সে বাঁচে, আর যার যাওয়ার বরাত আছে সে যায়।
প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ সমিতির হিসাব বলছে, এখনও ৪৮% মা বাড়িতেই সন্তান জন্ম দেন। আর ৩০ ভাগ মা গর্ভাবস্থায় হাসপাতালেই যান না। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা ও দুর্গম এলাকা।
প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌসী বেগম বলেন, আমাদের বার্তা হচ্ছে সবাইকে হাসপাতালে আসতে হবে।
দেশে ৩১৮টি চরে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও, এখনও সব চরে পৌঁছেনি ন্যুনতম স্বাস্থ্যসেবার এই সুবিধা।
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ড সভাপতি ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, চরাঞ্চলের অন্তত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে আমি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্টির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি।
সময় বদলালেও বদলায়নি ভাগ্যের চাকা। তাই মাতৃসেবার ও কিংবা স্বাস্থ্য সেবার নূন্যতম চাহিদাগুলো কবে নাগাদ পুরোপুরি পূরণ হবে, কিংবা সেবাটা তারা পাবেন সেই প্রশ্নের উত্তর অজানা এই চরবাসীর।