Joy Jugantor | online newspaper

যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আসতে পারে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব 

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২২

যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আসতে পারে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব 

সংগৃহীত ছবি

মেধা ও যোগ্যতার বিবেচনায় এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদের কাণ্ডারি হতে পারেন। টানা প্রায় দেড় যুগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নেতৃত্বে এসেছে সংগঠনটিতে। এর আগে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে শীর্ষ দুই পদের দায়িত্ব পেয়েছেন অনেকে, যারা তাদের সময়ে বেশ আলোচিত নেতা ছিলেন। আসছে সম্মেলনেও এমন কোনো চমক থাকতে পারে।  

ছাত্রলীগের ইতিহাসে আলোচিত লিয়াকত-বাবু (সভাপতি: লিয়াকত শিকদার, সাধারণ সম্পাদক: নজরুল ইসলাম বাবু) কমিটি। লিয়াকত শিকদার ঢাকা কলেজ থেকে এবং নজরুল ইসলাম বাবু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিটিতে এসেছিলেন। ২০০৬ সালে তারা দায়িত্ব ছাড়েন। এরপর টানা ১৬ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে দায়িত্বে এসেছেন। এ নিয়ে সংগঠনের মধ্যে খুব বেশি আলোচনা না থাকলেও অনেকেই চাইছেন নেতৃত্ব নির্বাচনে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের চেয়ে যোগ্যতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলীকে প্রাধান্য দেওয়া হোক।

তবে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগে প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয় না। যোগ্য এবং মেধাবী গুণাবলী সমৃদ্ধ নেতৃত্বকে নেতা নির্বাচন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই ছাত্রলীগের নেতৃত্ব আসতে পারে। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান, এমনকি মেডিক্যাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান থেকেও আসতে পারে। যে যোগ্য, মেধাবী এবং সাহসী তাকে নির্বাচিত করা হয়। যোগ্যতাই এখানে সবচেয়ে বড় মাপকাঠি।          

ছাত্রলীগের ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেমন নেতৃত্বে এসেছে তেমনি অন্য প্রতিষ্ঠান থেকেও এসেছে। ছাত্রলীগের সোনালী অর্জনের মধ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ছিলেন বিএম কলেজের নেতা, সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা ছিলেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বে ছিলেন; সাবেক সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ছিলেন মেডিক্যাল নেতা, তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জিএসও ছিলেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীমও ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এসেছে নেতৃত্ব। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগকে সু-সংগঠিত করতে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকেও নেতৃত্ব আসতে পারে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীরা যান কালেভদ্রে। এনিয়ে সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি সংগঠনের নেতাদের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে নিয়মিত যেতে বলেন। 

নেতাকর্মীরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার কারণে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দীর্ঘদিন ধরেই অকেজো পড়ে আছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই সব ধরনের কর্মকাণ্ড করেন। দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালন করতেই কেবল কেন্দ্রীয় নেতারা কার্যালয়ে যান। এই ধারা ২০০৬ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার রোটনের সময় থেকে শুরু হয়, যা এখনও পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এনিয়ে নেতাকর্মীরও ক্ষোভ আছে।

প্রতি বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের জন্য প্রার্থী হন। এবারও প্রার্থী অনেকে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হৃদয় সাইদুর রহমান হৃদয়, চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক তারেক আজীজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আল আমিন শেখ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল আফসারের নাম শোনা যাচ্ছে।

এ ছাড়া নেতৃত্বের রেসে আছেন বর্তমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, সহ সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন, সহ সম্পাদক মো. আনফাল সরকার পমন।

উত্তরবঙ্গ থেকে আলোচনায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ফরিদা পারভীন, সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন, শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পল্লব কুমার বর্মন।

বরিশাল বিভাগ থেকে আলোচনায় আছেন সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার, সহ সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ, সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), উপ-বিজ্ঞান সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়।

খুলনা বিভাগ থেকে রয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন, মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, উপ-বিজ্ঞান সম্পাদক খন্দকার হাবিব আহসান।

ময়মনসিংহ থেকে আলোচনায় আছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি খায়রুল হাসান আকন্দ, সহ সভাপতি সোহান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, সহ সম্পাদক এসএম রাকিব সিরাজী, সহ সম্পাদক মো. রিপন মিয়া, তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-সম্পাদক রশিদ শাহরিয়ার উদয়।

ঢাকার পার্শ্ববর্তী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক বিভাগ ফরিদপুর থেকে আলোচনায় আছেন কর্মসংস্থান সম্পাদক রনি মোহাম্মদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, ঢাবির মুহসীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদুল হক শিশির।

ঢাকা অঞ্চলের প্রার্থীদের মধ্যে সার্জেন্ট জহরুল হক হলের সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাইপুল্লা আব্বাছী অন্তর, এফ রহমান হলের সাবেক জিএস ও কেন্দ্রীয় উপ-দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাহিম, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক শামীম শেখ তুর্জ, শহীদুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ও কেন্দ্রীয় উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক মো. ইরফানুল হাই সৌরভ, উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক মো. নিয়ামত উল্লাহ তপন।

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বহুল প্রতীক্ষিত ৩০তম সম্মেলন আগামী ৮ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন ঘিরে এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস, প্রাণচাঞ্চল্য। নতুন নেতৃত্বে আসার জন্য দলের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে লবিং, তদবিরে তৎপর নেতারা। কে আসছেন আগামীর নেতৃত্বে, তারই প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন সবাই।

ছাত্রলীগের বিগত কমিটিগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভাগভিক্তিক রাজনৈতিক মেরুকরণের জন্য একেক সময় একেক বিভাগ থেকে নেতৃত্ব নিয়ে আসা হয়। যদিও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে নিয়মিত একজন থেকেই যাচ্ছেন শীর্ষ নেতৃত্বে। তাই অঞ্চলভিত্তিক এসব নেতাদের কাছে তদবিরের আশায় ছুটছেন পদপ্রত্যাশীরা। তবে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা, চারিত্রিক মাধুর্যতা, শিক্ষার্থীবান্ধব আওয়ামী পরিবারের নেতাদেরই নেতৃত্বে আনার কথা জানান দলের নীতি-নির্ধারক ফোরাম। এ ছাড়াও করোনা মহামারিতে মানবিক কাজে যারা আলোচনায় এসেছেন তাদেরও বিবেচনা করা হবে বলে জানা যায়।

তবে, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স ২৭ এর মধ্যে থাকলেই কেবল নেতৃত্বে আসার সুযোগ রয়েছে। সেই হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চলের অনেকেই ছিটকে পড়বেন কেন্দ্রীয় শীর্ষ পদ থেকে। তবে বিগত কয়েকটি কমিটিতে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ বছর বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব ২৯ করেছেন। নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, গঠনতন্ত্রে ২৭ বছর বয়স, এর বাইরে নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা) বড়জোর অনূর্ধ্ব ২৯ বিবেচনা করতে পারেন। কোনোভাবেই ২৯ এর বেশি কেউ নেতা হতে পারবেন না বলেই মনে করছেন দায়িত্বশীল নেতারা।

সেক্ষেত্রে বাদ পড়তে পারেন প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকা কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সোহান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, সহ সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম, সহ সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, সহ সভাপতি রাকিব হোসেন, সহ সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, আইন বিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাতসহ অনেকে।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব পাওয়ার প্রদান মানদণ্ড হচ্ছে মেধা, যোগ্যতা আর নেতৃত্বের গুণাবলী। এক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠান বা এলাকা থেকে এলো, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। বঙ্গবন্ধুকন্যা যোগ্য ছাত্রনেতাকেই ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের জন্য বিবেচনা করেন।