Joy Jugantor | online newspaper

বগুড়ায় মৃত্যুর দায় এড়াতে বন্ধুর লাশ গুম ও অপহরণের নাটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ০৯:১৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

বগুড়ায় মৃত্যুর দায় এড়াতে বন্ধুর লাশ গুম ও অপহরণের নাটক

গ্রেফতার হারুন অর রশিদ।

একসাথে বসে মাদক সেবন করেছিলেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার দুই বন্ধু। মাদকের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে মারা যান একজন।  এই মৃত্যুর দায়ভার এড়াতে লাশ গুম করে অপহরণের নাটক সাজান অপর বন্ধু।  কিন্তু রক্ষা হয়নি।  পুলিশের হাতে ধরার পরার পর বেড়িয়ে আসে আসল ঘটনা। 

গ্রেফতার সেই বন্ধুর নাম হারুন অর রশিদ (৩৪)। তিনি উপজেলার ইসলামপুর খাঁ পাড়ার বাসিন্দা এবং পেশায় অটোরিকশা চালক।  মাদক সেবনে মারা যাওয়া তার বন্ধু একই এলাকার কৃষক হুমায়ন কবির (৩৫)।  

গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিজ বাড়ির পাশের ডোবা থেকে হুমায়ুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে হারুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।  গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে এসব ঘটনা স্বীকার করেছেন হারুন। 

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী এসব বিষয় জানান।  

এসপি বলেন, গত শনিবার রাতে বাজারে আড্ডা দেওয়ার কথা বলে বের হন হুমায়ুন কবির। এরপর থেকে থেকে নিখোঁজ ছিলেন।  পরের দিন রোববার হুমায়ুনের ব্যবহত মুঠোফোন থেকে তার বাবার কাছে ফোন করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপরিচিত ব্যক্তি।  সোমবারেও ফোন করে কয়েক দফায় মুক্তিপণ দাবি করা হয়। 

এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে হুমায়ুনের নিজ এলাকার একটি ডোবা থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে তার বন্ধু হারুনকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। 

সংবাদ সম্মেলনে হারুনের স্বীকারোক্তির বরাতে পুলিশ জানায়,  শনিবার রাতে তারা দু'জন বন্ধু তার অটোরিকশায় করে মাদকদ্রব্য কিনতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা শহরে আসেন।  হারুনের বাড়িরে কেউ না থাকার সুযোগে সেখানে বসে পানীয় মাদকদ্রব্য ও ড্রাইডিল ট্যাবলেট একসাথে সেবন করতে  থাকেন। 

একপর্যায়ে হুমায়ন কবির অতিরিক্ত মাদ্রকদ্রব্য সেবন করায় মাতলামি করতে থাকে। একপর্যায়ে টিবওয়েল পাড়ে গেলে সেখানে পড়ে যান তিনি। তখন হারুন তাকে উঠানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ মাদ্রকদ্রব্য সেবন করার কারণে হুমায়ন বেসামাল হয়ে যায়। এ সময় হারুন পা দিয়ে হুমায়ুনের পিঠে জোরে কয়েকটি লাথি মারলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ পরে ভিকটিমের শরীর ঠান্ডা ও নিস্তেজ হয়ে যায় তখন হারুন বুঝতে পারে হুমায়ন মারা গেছে। 

হুমায়ুনের মৃত্যুতে সবদোষ নিজের কাঁধে আসবে ভেবে হারুন ঠিক করে লাশ গুম করে ফেলবেন।  এই ভাবনা থেকে নিজ বাড়িতে থাকা একটি সাদা প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে লাশকে তুলে রাখে।  পরে সুযোগ বুঝে এলাকার একটি ডোবায় নেমে বস্তাবন্দি হুমায়নের লাশের সাথে ইট বেঁধে বস্তাটি ডুবিয়ে দেয়। 

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কৌশল হিসেবে অপহরণ ও ভিকটিমের ব্যবহত মুঠোফোন ব্যবহার করে অপহরণ নাটক সাজান হারুন। 

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, গ্রেফতার হারুনকে আদালত পাঠিয়ে বিষয়গুলো আরও নিশ্চিত হতে রিমান্ড আবেদন করবো। পাশাপাশি দুপচাঁচিয়াতে মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যানদের মধ্যে ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী, (অপরাধ) আব্দুর রশিদ, (সদর সার্কেল ও মিডিয়া মুখপাত্র) ফয়সাল মাহমুদ, (সদর হেডকোয়ার্টার) হেলেনা আক্তার, সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আদমদীঘি সার্কেল নাজরান রউফ ও দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান আলী।