Joy Jugantor | online newspaper

এক যুগেও ঝুলে আছে বিস্ফোরক মামলা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:০০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ০৭:৩২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

এক যুগেও ঝুলে আছে বিস্ফোরক মামলা

ফাইল ছবি

পিলখানা হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন আড়াইশ’র বেশি বিডিআর সদস্য। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সাজা পেয়েছেন আরও প্রায় আড়াইশ সদস্য। তাদের সাজা খাটা হয়ে গেছে। অথচ এই পাঁচশ জনের মুক্তি মিলছে না। কারণ, তাদের ওপর ঝুলে আছে আরেকটি মামলা– বিস্ফোরকদ্রব্য বহনের মামলা। আর এই মামলাটি এক যুগেও নিষ্পত্তি হয়নি।

আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলা হাইকোর্টে আপিলের রায় পেরিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। অথচ একই ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলা এখনও বিচারিক আদালতের চৌকাঠ পার হতে পারেনি।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, এ মামলার বিলম্বের কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক আসামি।

তবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলছেন, এটি বিশ্বের বৃহত্তম একটি মামলা, যার আসামি সংখ্যা অনেক। মামলাটির চূড়ান্ত আপিল শেষ করতে সময় লাগবে এটাই স্বাভাবিক।

তবে বিস্ফোরক দ্রব্য বহনের অভিযোগে করা মামলাটি চলতি বছরের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী।

হত্যা মামলাটির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আশা করছি, স্বাভাবিকভাবেই হত্যা মামলাটি চলতি বছরের শেষে শুনানির জন্য আসতে পারে। তারপরও আমরা আদালতের কাছে শুনানির জন্য একটা তারিখ চাইব। আশা করছি, আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চেই এ মামলার শুনানি হবে।’

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এরই মধ্যে ২০৩ জনের পক্ষে আপিল এবং লিভ টু আপিল ফাইল হয়েছে। আরও অনেকের পক্ষে ফাইল করা হচ্ছে। আদালত আমাদের অনুমতি দিয়েছে, পেপারবুক ছাড়াই শুধু মেমো দিয়ে আপিল করতে। আমরা সেটা করেছি। এখন মামলাটি শুনানির জন্য তালিকায় আসবে। এরপর মামলার সারসংক্ষেপ জমা দিতে হবে। তারপর শুনানির তারিখ ঠিক করা হলে শুনানি হবে।’

এ মামলার শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠনের দাবি জানাবেন বলেও তিনি জানান।

তবে দীর্ঘ দিন ধরে বিস্ফোরক মামলাটি ঝুলে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আসামিপক্ষের এ আইনজীবী।

তিনি বলেন, ‘আদালতে খালাস পাওয়া ২৫৬ জন এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ২৪৭ জনের সাজা ভোগ শেষ হলেও মুক্তি মিলছে না এ মামলার কারণে। বিস্ফোরক মামলায় সাড়ে ১২শ’ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

‘তার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৮৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। মাসে দুই দিন মামলার তারিখ থাকে, সে হিসাবে এ মামলা শেষ করতে আরও ১০ বছর লেগে যাবে।’

হত্যা মামলায় যারা খালাস পেয়েছেন এবং যারা সাজা খেটে ফেলেছেন, তাদের জামিন চেয়ে বার বার আবেদন করা হলেও আদালত সেটি মঞ্জুর করছেন না। আদেশের সার্টিফায়েড কপি না পাওয়ায় হাইকোর্টেও আবেদন করতে পারছেন না আইনজীবীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী বলেন, ‘আমি মনে করি, এই ধীর গতি প্রসিকিউশন পক্ষের একটা প্রাকটিস, যেটা আসামিদের বের হওয়ার পথে একটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য করা হচ্ছে। হত্যা মামলাটির প্রতি কার্যদিবসে শুনানি হলেও বিস্ফোরক মামলাটির দীর্ঘ সময় পর পর শুনানি হচ্ছে। অথচ আইনের বিধান হলো, একটি ঘটনায় যে কয়টি মামলা হবে, সব কটি মামলা একই সঙ্গে পাশাপাশি চলবে। হত্যা মামলায় যারা সাক্ষী, বিস্ফোরক মামলায়ও তারাই সাক্ষী। তাহলে কেন এ মামলাটি নিষ্পত্তি করতে দেরি হবে?’

আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, দুটি মামলার অভিযোগ গঠন একই সঙ্গে হয়েছে। এখন বিস্ফোরক মামলাটি যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে রায় হয়, তাহলে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাবেন।

আইনজীবীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বিস্ফোরক মামলার বিচারিক আদালতের প্রধান আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কোনো ধরনের সময়ক্ষেপণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে না। আমরা কোনো সময় আবেদনও করিনি। মামলা তার নিজস্ব গতিতে চলছে।’

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা একটি বছর পিছিয়ে গেছি। আশা করছি, চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিস্ফোরক মামলাটি শেষ হবে।’

সাক্ষীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৮৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। তারপরই মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে শেষ হবে।’

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে মর্মান্তিক এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। পরে এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়।

হত্যা মামলায় ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে হাইকোর্ট রায় দেয়। গত বছর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে।

অন্যদিকে বিস্ফোরক মামলাটি বিচারিক আদালতে বিচারাধীন।

হাইকোর্টের রায়

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিশেষ বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে। বেঞ্চের অপর দুই বিচারক হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

পিলখানার ঘটনাটিকে কলঙ্কজনক উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে হাইকোর্ট সাত দফা সুপারিশ করে।

রায়ে নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের ফাঁসি বহাল রাখে হাইকোর্ট। বাকি আট জনকে যাবজ্জীবন, চার জনকে খালাস দেয়া হয়। বিচার চলাকালীন একজনের মৃত্যু হয়।

নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। ১২ জনকে খালাস দেয়া হয়। আসামিদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

এ ছাড়া ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। তাদের মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, আট জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড, চার জনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে হাইকোর্ট। আর এর মধ্যে খালাস দেয়া হয়েছে ২৯ জনকে।

এ মামলায় নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছিল, তাদের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। এর মধ্যে চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রাখে উচ্চ আদালত।

সূত্র: নিউজবাংলা