Joy Jugantor | online newspaper

দিনাজপুরে ঐতিহাসিক বউমেলা

যে মেলায় শুধু নারী ক্রেতারা কেনাকাটা করেন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫:১৮, ৭ অক্টোবর ২০২৫

যে মেলায় শুধু নারী ক্রেতারা কেনাকাটা করেন

দিনাজপুরে ঐতিহাসিক বউমেলা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রী শ্রী লক্ষ্মীপূজাকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হলো ৬৬ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। ব্যতিক্রমী এই মেলার বিশেষত্ব হলো—এখানে ক্রেতা শুধুই নারী। পুরুষদের মেলায় প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

প্রতিবছর লক্ষ্মীপূজার পরদিন ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামের সার্বজনীন দুর্গামন্দির চত্বরে বসে এ মেলা। এবারও সকাল থেকেই ত্রিপল ও শামিয়ানা টানিয়ে বসে শতাধিক দোকান, যেখানে নারীদের প্রসাধন সামগ্রী, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা ও নানা মুখরোচক খাবার বিক্রি হয়।মেলায় দু-একজন পুরুষ বিক্রেতা থাকলেও প্রবেশাধিকার কেবল নারীদের। এমনকি জামাই বা পরিবারের পুরুষ সদস্যরাও মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারেন না। ফলে মেলা চত্বরের বাইরে বিপুলসংখ্যক উৎসুক পুরুষ দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়।

বউমেলায় কেনাকাটা করতে আসা ফাতেমা সানু, মল্লিকা গুপ্ত ও মাধবী রানী জানান, এই মেলা আমাদের নারীদের জন্য আনন্দের উৎসব। নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারি, পরিচিতদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারি। প্রতিবছর আত্মীয়স্বজন মেলায় আসেন, এটা আমাদের মিলনমেলাও বটে।নববধূ অঞ্জলি রায় বলেন, বরসহ এসেছিলাম, কিন্তু বরকে বাইরে রেখে একাই মেলায় ঢুকতে হয়েছে।মেলার গেটে অপেক্ষমাণ সঞ্জয় রায় ও পলাশ দাস বলেন, জানি পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। তারপরও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এসেছি। তারা মেলায় ঢুকেছে, কেনাকাটা শেষ হলে আমরা সবাই বাড়ি ফিরব।

প্রসাধন সামগ্রী বিক্রেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, ক্রেতারা সবাই নারী হওয়ায় প্রসাধনী বেশি বিক্রি হয়। পাশাপাশি খেলনা ও খাবারের দোকানেও ভিড় থাকে।মেলার আয়োজক সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অশেষ রঞ্জন দাস ও সাধারণ সম্পাদক গৌচন্দ্র সরকার জানান, ৬৬ বছর আগে সুজাপুরের জমিদার বিমল বাবু এই মেলার সূচনা করেন।

জমিদার ভারতে চলে গেলেও তার রেখে যাওয়া এই ঐতিহ্য আজও অক্ষুণ্নভাবে পালিত হচ্ছে। শুরু থেকেই মেলাটি শুধু নারীদের জন্য, সেই নিয়ম এখনো বজায় রয়েছে।মেলার নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবকরাও দায়িত্ব পালন করেন।ফুলবাড়ী থানার ওসি একেএম খন্দকার মহিব্বুল বলেন, মেলায় সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলার সার্বিক বিষয়ে তদারকি করা হয়েছে।