কালাইয়ে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকরা
জয়পুরহাটে কালাই উপজেলায় শীতের ভরা মৌসুমে মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে আগাম শীতকালীন সবজি।প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ আর শীতকালকে বলা হয় সবজির ভরা মৌসুম। যখন হরেক রকম শাক-সবজির স্বাদ নেওয়ার সুযোগ মেলে। যদিও শীত আসতে অনেকটা সময় বাকী তবুও এর মধ্যে এ উপজেলার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি। ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, বেগুন, মুলা, পালংশাকসহ নানা শাক-সবজিতে ভরে গেছে কৃষকের খেত। ভালো দাম পাওয়ার আশায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেত পরিচর্যায় ব্যাস্ত কৃষকরা। এদিকে এরমধ্যে বাজারেও উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। তবে দাম অনেক চড়া।
কালাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর আগাম জাতের শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮০ হেক্টর। তবে চাষ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে।
সরজেমিনে গিয়ে দেখা যায়,এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সহ এলাকার মাঠগুলোতে দিনভর কৃষকদের ব্যস্ততা দেখা গেছে। সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, বেগুন, মুলা, লাউ, পটল, বরবটি, গাজর, পালং শাক, লাল শাকসহ হরেক রকম আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। কৃষকরা রোদে পুড়ে সবজির খেত পরিচর্যা করছেন। কেউ চারার পরিচর্যা করছেন আবার কেউ সার-বালাইনাশক প্রয়োগ করছেন। এছাড়াও যারা পিছিয়ে পড়েছেন তারা জমি প্রস্তত, বীজ রোপনে তোড়জোড় শুরু করেছেন।
কয়েকজন কৃষকরা বলেন ,পুরো শীতের সময়েই বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে। তবে মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। এ কারণে তারা শীত শুরু হওয়ার আগেই শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। তারা বরাবরই শাক-সবজি চাষ করে আসছেন। এতে তারা সফলও হয়েছেন।
এ উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা পারকাটা গ্রামের কৃষক লালমিয়া বলেন,এ বছর ৩০ শতক জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছি। আগাম শীত মৌসুমের জন্য যেসব সবজি চাষ করা হয় তার দাম ভালোই পাওয়া যায়। কিন্তু পরিচর্যা বেশি করতে হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। আবার বৃষ্টি হলে চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে ভালো দামের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়।
কালাই পৌরসভার বাসিন্দা,আব্দুল মোমিন বলেন, বেগুন, শিম, টমেটো,মিলে ৪০শতক জমিতে আগাম সবজি চাষ করেছি।এ বছর বৃষ্টির কারণে আগাম সবজি চাষে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।এজন্য একটু বেশি পরিচর্যা করতে হয়েছে।অনেক খরচ পড়ছে।তবে অসময়ে বাজারে এই সবজির চাহিদা থাকে অনেক। এ কারণে এই সবজিগুলো বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা যায়।এ জন্য আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আমাদের আগ্রহ বেশি থাকে।
আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন হাতিয়র গ্রামের আনোয়ার হোসেন কৃষক বলেন, সবজি চাষ করে আমার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। আমরা এখন স্বাবলম্বী। এখন আমাদের শাক-সবজি বিক্রির জন্য হাটবাজারে যেতে হয় না। খেত থেকেই পাইকাররা ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে যায়। দামও ভালো পাওয়া আশায় আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করি।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন,বৃষ্টির পর থেকে কৃষকরা আগাম শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু করেছেন। যা এরইমধ্যে বাজারে উঠেছে এবং কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। আগাম শীতকালীন সবজি চাষে একটু ঝুকি বেশি থাকে। এজন্য কৃষকদের সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার, জৈব সার এবং কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারের জন্য মাঠ পর্যায়ে তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন এবং কৃষকরা যেন সবজি চাষে কোনো প্রকার সমস্যায় না পড়েন এজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।
