Joy Jugantor | online newspaper

আঠারো কোটি মানুষের দেশে এখন ঊনিশ কোটি আওয়ামী লীগ!

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৩ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ০৪:৪০, ১৩ অক্টোবর ২০২০

আঠারো কোটি মানুষের দেশে এখন ঊনিশ কোটি আওয়ামী লীগ!

ডেস্ক রিপোর্ট

মাঝে মাঝেই ভাবি আর লিখবো না। লিখে কি হয়? শুধু শুধু শত্রু বাড়ে। কিন্তু চারপাশ দেখে চুপ থাকতে পারি না। নিজের ভেতরে একটা তাগাদা অনুভব করি। জানি সবই অরণ্য রোদন।

এদেশের সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী আমলাদের একটা বড় অংশ মনে এবং মগজে তীব্র ছাত্রলীগ বিদ্বেষ লালন করে। শুধু ছাত্রলীগ নয় এরা মোটামুটি ছাত্র রাজনীতিকেই ঘৃণা করে।

আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ : হলে থাকার কারণে দেখেছি কিছু স্বার্থপর মেয়ে দিন রাত মুখ গুঁজে শুধু বই পড়ে, রুমমেটদের সাথে লাইট জ্বালানো বন্ধ করাসহ অসংখ্য ছোটখাট ইস্যু নিয়ে চরম ঝগড়া করে। নিজের রুমের বা পাশের রুমের কেউ অসুস্থ হয়ে মরে গেলেও ফিরেও তাকায় না। এরা ক্লাসে প্রথম হয়। পরবর্তীতে শিক্ষক হয়, বিসিএস ক্যাডার হয়। এবং পেশাগত জীবনে যেয়ে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে নিজেদেরকে সেই দলের কর্মী বলে দাবি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিনেট নির্বাচনে একটা নাম দেখে খুব অবাক হই। যে মেয়েটা আমি ছাত্রলীগ করতাম বলে আমাকে বা আমাদেরকে এড়িয়ে চলতো সেই মেয়ে নীলদলের নমিনেশন নিয়ে নির্বাচন করছে। এক শিক্ষক নেতা এবং ঢাবি প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তাকে জিজ্ঞেস করলাম এই মেয়ে কিভাবে নমিনেশন পেলো? আমার শ্রদ্ধেয় দুই স্যার বললেন, ওতো ছাত্রলীগের নেত্রী ছিল। দলের জন্য ওর অনেক কন্ট্রিবিউশন। আমি স্যারকে বললাম ওর ভর্তির সেশন কত? কোন কমিটির নেতা ছিল। ওকে ফোন দিয়ে এখনই জিজ্ঞেস করেন। মেয়েটা আমার ইয়ারমেট। ছাত্রলীগ করা তো দূরের কথা বরং পলিটিক্যাল মেয়েদের সে সবসময় এড়িয়ে চলতো। এর আগের টার্মের কথা। একটা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের এক এমডির রুমে বসা। রুমে আরো দুই একজন আছে। উনি ছাত্রজীবনে কি কি করেছেন তার বিশদ বর্ণনা। সামনের মোসাহেবেরা জী ভাই জী ভাই করছেন। সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম ভাই আপনি কোন কমিটিতে ছিলেন? বেচারা ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেলেন। আমি তো মহাপাজি। মাননীয় এমডি কে বললাম ওমুক ওমুক ভাই নিশ্চয়ই আপনার কর্মী ছিলেন। বেচারা বিপদ আঁচ করতে পেরে তড়িঘড়ি করে বললেন- আমার জরুরি একটা মিটিং আছে বের হতে হবে। চেয়ার ছাড়তে ছাড়তে বললেন আসলে পড়াশোনা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতাম পলিটিক্স করার সময় পাইনি। উনার চেয়ারটা কিন্তু দলীয় বিবেচনায় পাওয়া।

আমার প্রশ্ন হলো দলের নেতাকর্মীকে বঞ্চিত করে এই চেয়ারগুলোতে স্বার্থপর সুবিধাবাদীদের কারা বসায়? সেই কালপ্রিটদের সবার আগে জনসমক্ষে আনা উচিত।

রাজনীতির নামে এই যে দুর্বৃত্তায়ন; এটা কি একদিনে ঘটেছে? এখন যারা গেলো গেলো করে রব তুলছেন, এতদিন কোথায় ছিলেন আপনারা? সবার চোখের সামনেই এই বিষবৃক্ষটা রোপিত হয়েছে। আস্তে আস্তে শিকড় গজিয়েছে, ডালপালা ছড়িয়েছে। একটা মানুষও টু শব্দটা করেন নি!

সর্বশেষ উপকমিটি গুলোতে যখন গণহারে হাইব্রিডদেরকে জায়গা করে দেওয়া হলো - বিবার্তায় সিরিজ নিউজ করেছিলাম। ৩/এ তে কয়েকদিন আন্দোলন চললো। বেশ কয়েকজনকে ম্যানেজ করা হলো। আন্দোলন শেষ হয়ে গেলো। যতদূর জানি আন্দোলনের ঐ কয়দিনে কাউয়াদের জনক এবং কাউয়ামুক্ত ছিল পার্টি অফিস।

সহযোগী এবং অংগসংগঠন গুলোর কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হলেই পার্টি অফিসে শুরু হয়েছে হাইব্রিডদের আনাগোনা। এখনই সময় এদেরকে প্রতিহত করার। নতুন কমিটি গঠনের পর ওমুকের দাদা রাজাকার ছিল, তমুকের বাবা জামায়াত নেতা, সে ছাত্রদল/ শিবিরের নেতা ছিল- এই টাইপের নিউজ আর লিখতে চাই না।

আমি এখনো বিশ্বাস করি যারা বিরোধীদলটা পার করেছে, ১/১১ তে মাঠে ছিল তারা এক হলে হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীরা দৌড়ে পালাবে। দল বাঁচাতে, শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সমস্ত সংকট আর মান অভিমান ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলাতে হবে, প্রয়োজনে পার্টি অফিস পাহারা দিতে হবে।

গতকাল চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশিরের জামিন মঞ্জুর হয়েছে। অনেককেই ফোনে খবরটা দিচ্ছিলাম। ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে ফোন করে বললাম, ভাই একটা ভালো খবর আছে। আমাদের শিশির ভাইয়ের জামিন হয়েছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভাই বললেন, আচ্ছা বলো তো আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি! আমাদের আপা প্রধানমন্ত্রী আর উনার পরীক্ষিত কর্মী শাহজাহান শিশির বিনা অপরাধে জেল খাটেন। তার জামিনই এখন আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি!

আঠারো কোটি মানুষের দেশে এখন ঊনিশ কোটি আওয়ামী লীগ। সর্বত্রই পরীক্ষিত ত্যাগী এবং যোগ্যদের অবমূল্যায়ন। তার চেয়েও বড় আক্ষেপের ব্যাপার হলো অযোগ্য এবং সুবিধাবাদীদের লাগামহীন দৌরাত্ম্য। এতে করে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। একদিকে আপনি যোগ্যদের তাদের প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছেন না অপরদিকে অযোগ্যদের মাথায় তুলে নাচছেন। একটা ফাঁপা অন্ত:সারশূণ্য কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছি আমরা। বড্ড ভয় হয়; সব তাসের ঘরের মতন উড়ে না যায়!