
সংগৃহীত ছবি।
বাজারে গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম উর্দ্ধমুখী। তবে মূল্য বেড়ে যাওয়ার সুফল ভোগ করছেন নওগাঁয় চাষীরা। ভাল দামের কারণে প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক লাভের অংকটা বেড়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত এসব সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জেলায় চলতি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে ৬ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজির আবাদ হয়েছে। যা থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। যার বাজারদর প্রায় ৪৬৭ কোটি টাকা।
সবজি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের বরেন্দ্রভূমি জেলা নওগাঁ। জেলার মাঠে মাঠে এখন গ্রীষ্মকালিন বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি চাষ হচ্ছে। বিস্তৃর্ণ মাঠে এখন বেগুন, করলা, কাকরোল, পটল, শসা, ঢেঁড়স, লাউ, মিষ্টি কুমড়া ও বিভিন্ন শাক সবজির সমারোহ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পরিচর্চায় ও বাজারজাতে ব্যস্ত চাষীরা। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় এবং বাজারে সরবরাহ কম থাকায় ভাল দাম পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।
সদর উপজেলার কসবা-কুয়ালগর গ্রামের সবজি ব্যবসায়ি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, পাইকারিতে প্রতি কেজি লাল বেগুন ৪৫ টাকা, সাদা বেগুন ৬০ টাকা, করলা ৬৫ টাকা, কাকরোল ও পটল ৩৫ টাকা, তরই ৩০ টাকা, দেশি আলু ৫০ টাকা ও হলেন্ডার আলু ৩৫-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৩৫ টাকা এবং লাউ প্রতিপিস ২০-২৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের বাচারিগ্রাম গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ। তিনি এবছর ১২ কাঠা জমিতে লাল জাতের বেগুন চাষ করেছেন। প্রতি সপ্তাহে জমি থেকে বেগুন উত্তোলন হচ্ছে সাড়ে ৫মন। পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি। কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, তিন মাসের এ ফসলে খরচ হবে প্রায় ২০ হাজার টাকা। যা থেকে এ মৌসুমে বিক্রি হবে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। অর্থ্যাৎ খরচ বাদে লাভ থাকবে অন্তত ৬০ হাজার টাকা। এ বছর ভাল দাম পেয়ে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছি।
লক্ষ্মিপুর গ্রামের কৃষক আফতাব বলেন, ৬ কাঠা জমিতে কাকরুলের আবাদ করেছি। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ কেজি উত্তোলন হচ্ছে। কিছুদিন আগে পাইকারিতে ৪০ টাকা বিক্রি হলে এখন ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে এ মৌসুমে প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হবে।
সবজি চাষী রইচ উদ্দিন বলেন, গ্রীষ্মকালিন সবজিতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। উৎপাদন কম হলেও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় ভাল দাম পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সবজিতে তেমন রোগ বালাই হয়নি। তাই ফলন ভাল পেতে পরিচর্চায় ব্যস্ত চাষিরা।
বাগাচারা গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন, সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বিপাকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। পাইকারি বাজারে বেগুন ৬০ টাকা কেজি। ওই বেগুন খুচরা বাজারে ৮০ টাকা। করলা ৭০ টাকা কেজি। দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে সবজি কিনে খাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
নওগাঁ উপপরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শাকসবজির উৎপাদন ভাল হচ্ছে। মাঠে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি রয়েছে। বাজারে কিছুটা ভাল দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। প্রতি কেজি শাকসবজি গড়ে ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষে প্রদর্শনী ও প্রনোদনার মাধ্যমে সহযোগীতা করা হচ্ছে। শাকসবজি থেকে এ বছর কৃষকরা ভাল মুনাফা অর্জন করবে। ফসল উৎপাদনে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।