Joy Jugantor | online newspaper

ধান-চাল সরবরাহে কৃষক ও মিল মালিকদের অনীহা

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩

ধান-চাল সরবরাহে কৃষক ও মিল মালিকদের অনীহা

ধান-চাল সরবরাহে কৃষক ও মিল মালিকদের অনীহা

রাজশাহী বিভাগে দুই মাসে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ছয় মেট্রিক টন ধান। এই সময়ে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৬ মেট্রিক টন। অথচ ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার ৭৬৪ মেট্রিক টন। সংগ্রহের হার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ২৩৭ মেট্রিক টন। সংগ্রহের হার ৩৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। তবে খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বলছেন, এখনো সময় আছে ধান-চাল সংগ্রহের। আশা করা যাচ্ছে সময়ের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহ করা যাবে।

এদিকে সরকারি গুদামে ধান-চাল সরবরাহ করতে কৃষক ও মিলারদের অনীহা রয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগের অনেক কৃষক গুদামে ধান দিতে দ্বিধাও করছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকারি দামের চেয়ে বাজারেই ধানের দাম বেশি। একই কথা চালকল মালিকদেরও।

জানা গেছে, আমন মৌসুম শেষে সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে ২৮ টাকা কেজি। আর সেদ্ধ চালের দাম নির্ধারণ করা হয় ৪২ টাকা কেজি। বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি এবং চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দামে। কৃষক ও মিলাররা ধান ও চাল বাজারেই বিক্রি করছেন বেশি। সংশ্লিষ্ট কৃষকেরা বলছেন, সরকারি গুদামের চেয়ে বাজারেই বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে। তাই বাজারেই বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরকারি গুদামে ধান-চাল দিলে তাদের ক্ষতি হবে। ধান ও চাল ক্রয় শুরু হয়েছে গত বছরের নভেম্বরের ১৭। চলবে আগামী  ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

রাজশাহী জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্র জানায়, রাজশাহীতে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৩৩ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত জেলায় এক কেজিও ধান সংগ্রহ করা হয়নি। কিন্তু চাল সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন। জেলায় সরকারি গুদামে চাল প্রদানে মিলারদের সাথে চুক্তি হয় ৫ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টনের। চুক্তিকৃত মিল আছে ৩৬টি। চুক্তিযোগ্য মিল আছে ১৪৩টি।

রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া খাদ্য গুদামে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪৪ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত সংগ্রহ শূন্য। পবা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১ হাজার ৪১৯ মেট্রিক টনের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৮৯৪ মেট্রিক টন। মোহনপুরে ১৩৭ মেট্রিক টনের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৫৫৭ মেট্রিক টন। বাগমারায় লক্ষ্যমাত্রা ৯৮ মেট্রিক টন। তবে এই উপজেলায় সংগ্রহ একেবারে শূন্য। তানোরে ৩৪৯ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ ৫৬ মেট্রিক টন। গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৮৯৬ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ মাত্র ১০ মেট্রিক টন। পুঠিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ৩৮৩, সংগ্রহ ৭৫ মেট্রিক টন। দুর্গাপুরে ৯৭ মেট্রিক টনের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। চারঘাটে লক্ষ্যমাত্রা ১৫ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে সংগ্রহ শূন্য। বাঘায় কোনো লক্ষ্যমাত্রা না থাকলেও সেখানেও শূন্য।

বাগমারা উপজেলার কৃষক আব্দুল লতিফ জানান, ‘স্থানীয় বাজারে আমরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছি। গুদামে ধান দিলে অন্যান্য অসুবিধাও আছে। যেমন সরকার নির্ধারিত তাপমাত্রায় ধান শুকনো, ধুলো-বালি পরিষ্কার করা এবং তারপর পণ্য গুদামে পৌঁছে দেওয়া। এছাড়া টাকা পেতে আরো দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। আবার অনেক সময় টাকা কেটে রাখে।’ রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ‘কামাল অটো রাইস মিলে’র মালিক কামাল উদ্দিন জানান, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও তিনি এক কেজি চালও সরবরাহ করেননি। তিনি বলেন, ‘বাজারে সবচেয়ে সস্তা ধান স্বর্ণা প্রতি মণ বিক্রি হয় ১ হাজার ২৪০ টাকায়। দাম বেশি হওয়ায় ধান কিনতে পারিনি। ফলে সরকারি গুদামে কীভাবে চাল সরবরাহ করব?’ কামালের অভিযোগ, ‘বড় মিল মালিকরা চড়া দামে ধান কিনছেন, ফলে ধানের দাম বাড়ছে।’

রাজশাহী চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ধান থেকে চাল উৎপাদন করতে প্রতি কেজিতে কৃষকদের খরচ হয়েছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, অথচ সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ৪২ টাকা। এ কারণে মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিতে চাচ্ছেন না। আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জি এম ফারুক হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘ধান-চাল সংগ্রহের এখনো সময় আছে। আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদী।’