Joy Jugantor | online newspaper

ভালো নেই বগুড়ার শেরপুরের সবজির চারা চাষীরাও

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ভালো নেই বগুড়ার শেরপুরের সবজির চারা চাষীরাও

আটকে থাকা সবজির চারা ভালো রাখার জন্য পরিচর্যা করছে চাষী। বগুড়ার শেরপুরে তোলা ছবি।

বগুড়ার শাজাহানপুরের মতো শেরপুর উপজেলার দুটি গ্রামও সবজি চারা গ্রাম হিসেবে সুখ্যাতি পেয়েছে। গ্রাম দুটি হলো উপজেলার সীমাবড়ী ইউনিয়নের বৈটখর ও গাড়ীদহ ইউনিয়নের রানীনগর। এই দুটি গ্রামে প্রতি বছর দুই কোটি টাকার সবজির চারা কেনাবেচা হয়। আবহাওয়া অনূকুলে না থাকায় এই উপজেলার গ্রাম দুটিতে চারাগুলো আটকে আছে। এতে বড় ধরণের লোকসানের শঙ্কায় আছেন চাষিরা।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, এই দুইটি গ্রামে আগাম শীতকালীন সময়ের সবজির বাজার দখল করতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে মোড়ানোসহ বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যমে বীজ রোপন করে উপযুক্ত চারা তৈরী করেছেন। শেরপুর উপজেলার শীতকালীন সবজির চারা নিজেরা রোপন করে বাজার করে এবং এর বিশেষ চাহিদা রয়েছে।

উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের বেগুন, মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, বাধাকপি চারা ময়মনসিং, তেঁতুলিয়া, ঠাকুরগাও কুড়িগ্রাম, নাটোর, জলঢাকা, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাষীরা চারা সংগ্রহ করে চাষ করে। শীতকালেই শুধু নয়, সারা বছর সবজির চারার চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করেন এ উপজেলার চাষিরা। তবে অর্ধেক বিক্রয় হয়েছে। এরই মধ্যে ভারি বর্ষনে অর্ধেক বিক্রয়রের অপেক্ষায় রয়েছে। এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছে চাষীরা। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার চারা বিক্রয় হয় এই উপজেলা থেকে।

রানীনগর গ্রামের (বীজ রোপন) চাষী শরিফ উদ্দিন মিন্টুর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, জৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে জমি প্রস্তুতি শুরু করি। আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টি ও রোদ থেকে বাঁচাতে চারা বীজের বেডের ওপর পলিথিনের ছাউনি দিতে হয়েছে। নিজস্ব প্রযুক্তি, পরিচর্যা, সার ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগে এ চারা তৈরী করি। এ চারা ৫ মাস পর্যন্ত বিক্রয় হয়। এই ৫ মাসে তিন থেকে চার বার চারা তৈরী করা যায়। আগাম সবজি চাষের চারা তৈরী হয়েছে। শীতে সবজির বাজার দখল করতে আমরা ব্যস্ত সয়ম পার করছি। চারার চাহিদা থাকলেও এবার আবহাওয়া বর্তমানে অনুকুলে নেই। এ জন্য বর্তমানে চারার চাহিদা কম। 

নিফা নার্সারীর চাষী (বীজ রোপন) রোহান জানান, এক কেজি বীজে প্রায় ১ লক্ষ চারা তৈরী হয় এর মাঝে ১০ হাজার নষ্ট হয়। প্রতি হাজার টমেটো চারা গত বছর মৌসুমে বিক্রয় হয়েছে ২৬শ থেকে ৩ হাজার টাকা। এবার এখনো ফুল মৌসুম শুরু হয়নি তবে বর্তমানে বিক্রয় হচ্ছে কম দামে। মৌসুমের সময় চারার দাম বৃদ্ধি পাবে। মরিচ, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপির চারার দাম গত বছরের চেয়ে এবার বেশি।

নীলফামারী থেকে চারা নিতে আসা কবির হোসেন জানান, এখানে বিজলী মরিচ ও লিডার কপি এবং টমেটোর চারা খুব ভালো। তাই আমরা এখান থেকে প্রতি বছর চারা সংগ্রহ করে প্যাকেট করে নিয়ে যায়। আগাম সবজি বাজারে তুলতে চারা সংগ্রহ করছি। এবার বসকিছুর দাম বৃদ্ধি হওয়াতে চারার দামও বেড়ে গেছে।

নন্দীগ্রাম থেকে চারা নিতে আসা রফিকুল ইসলাম জানান, লিডার কপি, বিজলি মরিচ ও টমেটোর চারা সংগ্রহ করছি। রোপনের ৬০ দিনের মধ্যে শীতের বাজারে আসবে চাষিদের উৎপাদিত ফুলকপি ও বাঁধা কপি। এরই মধ্যে লাউ, ঝিঙ্গা, মুলা বাজারে উঠতে শুরু করেছে। শিম, টমেটো, বেগুন কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে উঠবে বলেও জানান।  রানীহাটের চাষি শী শুমহন্ত বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষাবাদ করছি। গত বছর এক একর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে খরচ বাদে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছি। চলমান বাজার ও আবহাওয়া ভালো থাকলে একই জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশা রাখছি। শেরপুর উপজেলার বেশ কিছু ভূমিহীন চাষি রয়েছেন। যারা জমি বর্গা বা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। এসব সবজি ক্ষেতে দৈনিক মহিলা ৩০০ টাকা ছেলে ৫০০টাকা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করে চলে অনেক কৃষি শ্রমিকের সংসার।

বাবলু মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক, মুঞ্জুল হোসেন, খালেক শেরপুর উপজলো কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার জানান, এ বছর ৭ হেক্টর জমিতে বীজ চারা তৈরী হয়েছে। শেরপুর উপজেলায় রবি মৌসুমে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চাষাবাদ চলমান রয়েছে। বেশি ফলনের জন্য আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশা রাখি। 

এর আগে থেকে শাজাহানপুরের শাহনগর এলাকার সবজির চারা উৎপাদনকারী নার্সারিগুলোতে একই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার নার্সারি মালিক সমিতির তথ্যমতে, বর্ষার শেষে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সবজি চাষীদের আগমন কমে যায়। এতে উপজেলার নার্সারি মালিকদের প্রায় চার কোটি সবজির চারা আটকা পড়ে।