বর্ষা চলে গেলেও খাল-বিল ও নদী-নালাকে কানায় কানায় পানিপূর্ণ করে রেখে গেছে। ভাদ্র মাসের খাল-বিলে ভরা পানি মানেই কৃষকের মুখে সোনালি হাসি। কেননা বিল-ঝিলের পানিতে পচিয়েই বের করতে হয় বাংলাদেশের সোনালি আঁশ খ্যাত পাট।
নওগাঁর বদলগাছীতে পুরোদমে চলছে পাট ধোয়ার ধুম। এলাকার বিল-ঝিল, গ্রামীণ সড়কের দুপাশের খালসহ যেখানেই বর্ষার পানি জমেছে সেখানেই চলছে পঁচা পাট ধুয়ে সোনালি আঁশ বের করার কাজ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাট বীজ বপন করতে হয়। ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই পাট কাটা শুরু হয়। কাঁচা পাট দু সপ্তাহ পানিতে পচিয়ে আঁশ বের করতে হয়। চলতি পাট মওসুমে এ উপজেলায় ২০০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও বেশ ভালো। এলাকার হাটগুলোতে পাট বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। এখন পুরোদমে চলছে পাট ধোঁয়ার কাজ। বর্তমানে পাটের বাজার দর মণপ্রতি ২৮০০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত।
উপজেলার বালুভরা ইউপির দোনইল গ্রামের মোক্তাউল হোসাইন আড়াই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। ভেজা পাট শুকানোর পর ১৮ থেকে ২০ মণ পাট পাওয়ার আশা তার। আর সিনট(পাটকাঠির আঞ্চলিক নাম) জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার করবেন।
মোক্তাউল হোসেন বলেন, দুবছর থেকে পাটে খুব ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এ বছরও দাম ভালো। তাই দ্রুত পাট ধুয়ে শুকানোর চেষ্টা করছি। পাট ধোয়া শ্রমিক দুইভাবে কাজ করে। কেউ ৬০০ টাকা দিন মজুরীতে কাজ করে। আবার কেউ সারাদিন যত আটি পাট ধুতে পারবে তত আটি পাটকাঠি নিয়ে নিবে।
দোনইল গ্রামের দিনমজুর মনতাজ আলী জানান, পাট ধুয়ে দিলে মালিক নিবে পাট আর সে নিবে পাটকাঠি এই চুক্তিতে কাজ করছে। সে প্রতিদিন ২০ আটি করে পাট ধুঁতে পারে।
একই গ্রামের হাতের আলী জানান, পাট ধোয়ার কাজ খুব কঠিন। সারাদিন পানির মধ্যে থাকতে হয়। তাই সবাই ধুঁতে চান না। একারণে মজুরী একটু বেশি। প্রতিদিন ৬০০ টাকা মজুরী নেন তিনি।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান আলী বলেন, কাঁচা পাট কাটার পরপরই তা পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। পানিতে ডুবানোর ১৫ দিন পরই আঁশ ছাড়ানো যায়। এসময় খালে বিলে পানিও থাকে। তাই যেসব কৃষক পাট চাষ করেছেন তারা এসময় পাট ধোয়ার কাজে খুবই ব্যস্ত থাকে।