Joy Jugantor | online newspaper

বগুড়ার শিবগঞ্জে কচু চাষিদের দাম নিয়ে শঙ্কা!

রবিউল ইসলাম রবি

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ১৬ জুলাই ২০২১

বগুড়ার শিবগঞ্জে কচু চাষিদের দাম নিয়ে শঙ্কা!

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কচু ক্ষেত।

গত কয়েক বছর ধরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক কৃষকেরা কচু চাষে সফলতা দেখলেও এবার দাম নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, করোনা অতিমারির কারনে চলমান সংকটে পাইকাররা কম আসছে। ফলে কচু বিক্রি ও ভালো দাম পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কচুর আদি উৎপত্তিস্থল উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে হলেও দীর্ঘদিন ধরে শিবগঞ্জ উপজেলার সমতল ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৫২০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বর্ধমান জাতের কুড়ি কচু। কোন লক্ষমাত্রা না থাকলেও খরিপ-১ মৌসুমে উপজেলার প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে এবার কচুর চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে কুড়ি কচু ২০০ হেক্টর, পানি কচু ৫০ হেক্টর ও লতিরাজ কচু ৫০ হেক্টর।

উপজেলায় কচুর গোত্রীয় সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় মুখী কচু বা কুড়ি কচু। কুড়ি কচু ছড়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ কচুর গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে তুলতে হয়। এছাড়াও পানি কচু ও লতিরাজ কচুও চাষ হয় এই অঞ্চলে।

স্থানীয় কচুচাষি সূত্রে জানা যায়, আমরা ফাল্গুন মাসে কচু রোপন করে ভাদ্র মাসে তুলি। পলি দোআশঁ ও এটেল মাটিতে কচু চাষ ভালো হয়। এ ফসলে ৪ থেকে ৫ বার সেচ দিতে হয়। চাহিদা বেশি থাকলে অনেকে ৮-১০ সপ্তাহ পরেই কচু তোলা শুরু করি। 

কচু চাষে জৈবসার বেশি লাগে। তবে কীটনাশকের ব্যবহার নেই বললেই চলে। ধান ও অন্যান্য সবজি চাষের তুলনায় কচু চাষে ২ থেকে ৩ গুন বেশি লাভ হয় বলে জানান কৃষকরা। উপজেলার এই কচু রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরেই সরবরাহ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার শিবগঞ্জ ইউনিয়নের ২০০ হেক্টর বিস্তৃর্ণ দিগন্ত মাঠ জুড়ে করা হয়েছে কচু চাষ। যতদুর চোখ যায় দেখা মেলে সবুজ কচু গাছের। এছাড়াও উপজেলার পৌরসভা এলাকার অর্জুনপুর, বেড়াবালা, মোকামতলা, দেউলী, সৈয়দপুর, কিচক, ময়দানহাট্টা ইউনিয়নে মাঠ জুড়ে ১০০ হেক্টর কচু চাষের দেখা মেলে।

মাঠে কচুর জমি চোখে পড়লেও সম্প্রতি কৃষকদের বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা ভাটা পড়েছে। এর কারন হিসেবে কৃষকরা দাবি করছেন, করোনার কারনে আগের মত পাইকাররা আসছেন না। এ পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত কচুর ব্যবসার সংকট কাটবে না।  

উপজেলার সদর ইউনিয়নের উথুলী ও ধোন্দাকোলা এলাকার কচু চাষী অনিমেষ চন্দ্র মদক ও রিপন কুমার মদক জানান, ধান ও অন্যান্য সবজি চাষের তুলনায় কচু চাষে ২ থেকে ৩ গুন বেশি লাভ হয়। বর্ধমান জাতের কুড়ি কচু চাষে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে আমাদের পরিবারে। আমরা এবার ৩ বিঘা ও ৫ বিঘা জমিতে কচু চাষ করেছি। গতবার ভালো দাম পেয়েছি। দেশের চলমান অবস্থার কারণে এবার দাম নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছি।

উপজেলার ধোন্দাকোলা এলাকার কৃষক চান্দু পোদ্দার বলেন, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে কচু চাষ করেছি। ২বিঘা জমির কচু তুলেছি। বিঘা প্রতি ৬০মন করে কচু হয়েছিলো। পাইকারী প্রতিকেজি ২০ টাকা হিসেবে ১লক্ষ ২০হাজার টাকা বিক্রি করেছি। খরচ বাদে প্রায় ৬০ হাজার টাকা লাভ করেছি। 

কচু চাষী সমর কুমার প্রাং বলেন, গত বছর প্রতি বিঘা কচু ৭০-৮০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছিল। এবার সেই কচু ৩৫-৪০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। বাজারে এখন প্রতি কেজি পাইকারি কচুর দাম ২৪ টাকা হিসেবে প্রতি মন কচু ৯৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত সপ্তাহে এই দাম ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা। 

কৃষক পরেশ মন্ডল বলেন, এ অঞ্চলের কচু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল বিভাগীয় শহরগুলোতে রপ্তানি হয়। এবার উৎপাদন ভালো হলেও বড়বড় পাইকাররা কচু কিনতে আসছে না।

স্থানীয় কৃষক মমতাজ, মোংলা, নান্টু, গোলা ও নিপেনদের ভাষ্যে, দেশের চলমান অবস্থা স্থির থাকলে কচুর দরপতন হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। এ ছাড়াও প্রতি মণ কচু জমি থেকে তুলে বাছাই করতেই বাড়তি আরও ৫০০ টাকা খরচ হয়। আবার খুচরা বাজারেও প্রতিদিনই একটু করে দাম কমছে। এ জন্য কৃষকদের লাভের অংকও কমছে।

শিবগঞ্জ থানা বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী মোন্তাজ বলেন, গত সপ্তাহে কুড়ি কচু ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও এ সপ্তাহে দাম কমে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আগামী সপ্তাহে দাম আও কমতে পাবে। 

বগুড়া জেলার বায়ার ক্রোপ সায়েন্স কোম্পানী লিমিটেডের সিনিয়র টেরিটরি অফিসার কৃষিবিদ গোতম চন্দ্র দাস বলেন, বগুড়ার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলা শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া কৃষির জন্য মানানসই। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কৃষকদের এবার কচুর দাম পাওয়া মশকিল হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার দৈনিক জয়যুগান্তরকে বলেন, কচু চাষ খুবই লাভজনক পেশা। দিন দিন কচুর চাষ এই অঞ্চলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুড়ি কচুর পাশাপাশি পানি কচু ও লতিরাজ কচু চাষ করেও কৃষকরা কম সময়ে লাভবান হতে পারে। প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন খরচের দ্বিগুনের বেশি লাভ হয় বলে কৃষক কচু চাষের দিকে ঝুঁকছে।