ছবি সংগৃহীত
নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার কিত্তিপুর ইউনিয়নের জাগেশ্বর গ্রামে পৌঁছালে দেখা মিলবে শত শত পানের বরজ। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির মানুষগুলো কৃষি জমিতে পানের বরজ গড়ে তুলেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৪শ থেকে ৫শ বরজ নিয়ে গ্রামটি এখন পানপাতা গ্রাম নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
গেল দশ থেকে পনেরও বছর যাবত এলাকার চাষিরা ধানের পাশাপাশি পান পাতা চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন। তাই এলাকার যুবকরা নতুন করে গড়ে তুলছেন পান পাতা চাষ প্রক্রিয়া পানের বরজ। আবহাওয়া এবং চাষ পদ্ধতি অনুকূল হওয়ায় পান পাতা চাষ গেলো কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ।
জাগেস্বর গ্রামের সুরেন সরকার গেল আশ্বিন মাসে পরলোক গমন করেন। তার স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে পরিবার ছিল। সুরেন সরকার মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী নমিতা সরকার ও তার ছেলে মিলে ধান চাষের পাশাপাশি পান চাষ করে লাভবান হয়েছেন। স্বামীর রেখে যাওয়া দুটি পানের বরজ থেকে পান বিক্রি করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন নমিতা।
নমিতা জানান, একটি পানের বরজ নিয়ে তার স্বামী মৃত সুরেন সরকার পান পাতা চাষ শুরু করেছিলেন বিশ বছর আগে। লাভবান হওয়ায় পরবর্তীতে আরও একটি পানের বরজ স্থাপন করেন। একটি বরজ ২১ শতাংশ জমিতে এবং অপরটি ১৮ শতাংশ জমিতে তৈরি করা পানের বরজ দুটি। একটি বরজ থেকে মৌসুমে ১ থেকে দেড় লাখ টাকার পানপাতা বিক্রি করে থাকেন তিনি। গ্রামের প্রতিটি মানুষের পানের বরজ আছে। শুধু ধান চাষ করে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে সংসার চালায়। ধানের পাশাপাশি তারা পান পাতা চাষে মনোযোগী হয়েছেন। একটি পানের বরজে খরচ হয়ে থাকে প্রচুর।
প্রতি বছর দশ থেকে পনেরও হাজার টাকার কীটনাশক, শলা, জাংলা, উরা, ছুচকাবারী, সাতহাতি, বাঁশ, সরঞ্জাম ছাড়াও দিনমজুর যারা দৈনিক পানের বরজ দেখাশোনা করেন তাদের দৈনিক ৪শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত মজুরি দিতে হয়। সেই তুলনায় পানপাতা বিক্রি করে তাদের লাভের পরিমাণ কম থাকে বলে জানান এই পান চাষী।
এদিকে পান পাতা চাষ নিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামসুল ওয়াদুদ জানান, পান পাতা ঔষধি খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে এর চাষ পদ্ধতিতে কীটনাশকের ব্যবহার বেশি হলে পান পাতার ঔষধি গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পান চাষিদের কীটনাশকের ব্যবহার কম করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া ধান চাষের পাশাপাশি জাগেশ্বর এলাকার মানুষদের পান চাষে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সবসময় চাষিদের পাশে থাকবে।
পান পাতা চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়ে এনেছেন জাগেশ্বর গ্রামের মানুষেরা। সহযোগিতা ও সঠিক চাষ পদ্ধতি মেনে ধান চাষের পাশাপাশি পান চাষে আরও অগ্রগতি ভূমিকা রেখে কৃষি খাতে এর সাফল্যের ধারা বজায় রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।